একজন দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসীর জীবন কাহিনী ও সফলতার গল্প




SABD | JOHANNESBURG |RSA



একজন দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসীর জীবন কাহিনী  ও সফলতার গল্প


বাংলাদেশে তখনো ইয়াবার চল শুরু হয়নি।সবে আমাদের অঞ্চলে গাঁজা আর ডালের ব্যবহার শুরু হলো।ওই সময়  এলাকার খুরশিদ শিকদারের ছেলে তপু শিকদার এগুলোতে জড়িয়ে গেলো।

এক পর্যায়ে তপু শিকদার তার বাবার গায়েও হাত তুললো।বাধ্য হয়ে বাবা খুরশিদ শিকদার চিন্তা করলো তপু এলাকায় থাকলে মান ইজ্জত নষ্ট হবে,তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়াই ভালো। 

তার কিছুদিন পরে তপুকে সাউথ আফ্রিকায় পাঠিয়ে দেয়া হলো।সেই তপু সাউথ আফ্রিকায় এসে আর কারো সাথে যোগাযোগ না করলেও সে ভালো হয়ে গেছে।এখানে সে ২৫টি দোকানের মালিক।কঠোর পরিশ্রম করে বেশ ভালো অবস্থান তৈরী করে নিয়েছে। 

সাউথ আফ্রিকার সিটিজেন হয়ে গেছে তপু।দুইবার হজ্ব করে এসেছে।এখানে সাউথ আফ্রিকায় বিয়েও করেছে তপু।কিন্তু তার এই মহান জীবন যাপন তার বাবা খুরশিদ শিকদার দেখে যেতে পারেনি।বর্তমানে তপুর মা নেই, বাবাও নেই।তপুর মূলত বাংলাদেশে আর কেউই নেই।

সে প্রায়ই তার বাবার কথা মনে করে কাঁদে আর বলে আমার বাবার শখ ছিলো আমাকে মানুষ হিসেবে দেখে যাবে, আমি তপু মানুষ হয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার বাবা 'মানুষ তপু'কে দেখে মরতে পারেনি।শুধু এই অভিমানে তপু আর কোনোদিন বাংলাদেশে যায়নি।তার সাথে বাংলাদেশের কারও যোগাযোগ নেই।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত আরও একজন লোক আছে যাকে এক সময় বাংলাদেশের অনেকেই চিনতো। আমাদের দেশের হাই প্রোফাইলের একজন লোক। 

তার সুন্দর একটি জীবন ছিলো, স্ত্রী ছিলো, সন্তান ছিলো। কোনো এক অজানা অভিমানে একদিন লোকটি দেশের সবটুকু মায়া ছেড়ে সাউথ আফ্রিকায় চলে এলো। 

আমার ভাবতে কষ্ট হয় এলাকার সবচেয়ে ভদ্রলোকটি এখানে হয়ে উঠেছে নিকৃষ্ট একজন মানুষ! এখন তার এতো অধঃপতন হয়েছে সে দেশে যায় না, নিয়মিত স্ত্রী-সন্তানের খবরও রাখে না। তার সাথেও কারও যোগাযোগ নেই।আসোলে প্রবাস জীবন বড়ই অদ্ভুত।এখানে এসে অনেক খারাপ লোক ভালো হয়ে গেছে, আবার ভালো লোক হয়ে গেছে বড় নষ্ট।

অদ্ভুত কোনো এক তাড়নায় আমরা এভাবে অনেকেই বদলে গেছি। ভেবে দেখলে দেখবেন আমাদের জীবনে এমন লোকও ছিলো যাদের ঘৃণা করতাম, কিন্তু এখন তাদের সাথে বন্ধুত্ব করেছি আবার এমন লোক ছিলো যাদের সাথে কথা না বললে ঘুম হতোনা কিন্তু এখন সময়ের প্রেক্ষাপটে বছর পেরিয়ে যুগ হয়ে গেলো অথচ তাদের সাথে যোগাযোগ হয় না।

এই প্রবাস জীবন আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে, অনেক কিছু নিয়েছে, অনেক রকমের লোক দেখিয়েছে এবং অনেক কিছু শিখিয়েছে।সবচেয়ে বেশি শিখিয়েছে বদলে যাওয়া। ভালো পথে হোক কিংবা মন্দ পথে হোক; আমরা বদলে গেছি এবং এই বদলে যাবার পিছনে হয়তো আমাদের হাত নেই। 

সময়ই আমাদের বদলে ফেলেছে।এখানে এসে যারা মরে গেছে, তারা পচে গেছে, যারা বেঁচে আছে তারা বদলে গেছে।এটাই পৃথিবীর নিয়ম।মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়; কারণে অকারণে বারবার বদলায়।পরিস্থিতির শিকার হয়ে বদলে যেতে হয়।অতীত ভুলে সামনের দিকে চলার প্রেরণায়!! 

Comments