আফ্রিকার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি মেলেনি-উজ্জ্বল
SAPB | JOHANNESBURG | RSA
আফ্রিকার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি মেলেনি-উজ্জ্বল
জোহানেসবার্গ :
দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত উজ্জ্বল হোসেন।বাড়ি মেহেরপুরের মুজিবনগর।একটু সুখের আশায় তিনি দীর্ঘ সময় দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে থেকেছেন।ফিরে এসে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন।সেখানকার ডলারের জীবন থেকেও গ্রামের ব্যবসায় বেশ আছেন বলে মন্তব্য করেন।
উজ্জ্বল বলেন ‘১০ লাখ টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছিলাম হীরার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়।দেশটিতে আসার পর থেকেই কেমন জানি আতঙ্ক কাজ করতো।কষ্ট,হতাশা ও অনিশ্চয়তায় প্রতিটা মুহূর্ত কাটতো।’
‘লোকমুখে কত কথাই না শোনা যায়।তেমনি আমিও শুনেছিলাম।স্বর্গরাজ্য দেখবো বলে টাকা-পয়সা জোগাড় করেছিলাম।অবশেষে পাড়িও জমিয়েছিলাম,তবে সফল হতে পারিনি।পাহাড়ঘেরা দেশ, চারদিকে ফলমূলের সমাহার। চারদিকে খাবারের ছড়াছড়ি।আপেল,কমলালেবুসহ আর কত কি।’
তিনি বলেন, ‘শুরুর দিনগুলো খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না। রাস্তাঘাট পরিবেশ পরিস্থিতি সবই অচেনা-অজানা।ধীরে ধীরে জানাশোনার পরিধি বাড়তে থাকলো।ব্যবসা-বাণিজ্য বুঝতে শিখলাম।একটা সময় নিজেই একটা দোকান দিয়েছিলাম।’
কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা হচ্ছিলো জানতে চাইলে উজ্জ্বল জানান,যখন অভাবে ছিলাম তখনই ভালো ছিলাম। টাকাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ায়।একটা থেকে ধীরে ধীরে ৪টা দোকানের মালিক হলাম।কর্মচারীর সংখ্যাও বাড়তে থাকলো। মূলত আমার দোকানে চারজন বাংলাদেশিসহ দুজন আফ্রিকান নারী কাজ করতো।
তিনি আরও জানান,আফ্রিকায় আসার এক বছরের ভেতর আমি বেশ কিছু টাকার মালিক হই।আশপাশের বাঙালিরাও জেনে গেলে আমার ব্যবসার পরিস্থিতি।বাঙালিরাই আমার সঙ্গে শত্রুতা করেছে।তাদের কারণেই বেশিরভাগ সময় সমস্যায় পড়েছি।কত রাত যে আমার ঘুমহীন কেটেছে তার কোনো হিসাব নেই।
শুরু হলো কষ্টের জীবন।আফ্রিকার কালোরা রাতে ঝাঁপিয়ে পড়তো বাঙালিদের ওপর।দোকানে হামলা করে সব লুটে নিতো।কিছু বলতে চাইলে গুলি করার হুমকি আসতো।প্রতিবাদ করলে নিশ্চিত মৃত্যু।কিছুতেই কিছু করার ছিল না।আমার উন্নতি যেভাবে শুরু হয়েছিল ঠিক সেভাবেই পতন হতে লাগলো।আফ্রিকার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি মেলেনি। একটা সময় শখের দোকান ছেড়ে জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি।
নিরাপত্তার বিষয়ে উজ্জ্বল বলেন, ‘এদেশে চারদিকে আতঙ্ক।সব সময় আল্লাহকে ডাকতাম রাতটা যেন ভালোভাবে কাটে।দিনে টাকা-পয়সা সঙ্গে নিয়ে কোথাও যেতে পারতাম না।আবার রাতে ঠিকমতো ঘুমও আসতো না সন্ত্রাসীদের ভয়ে। শুধু ভাবতাম জানি না দেশে ফিরতে পারব কিনা?বেশিরভাগ নিগ্রো (কালো) কোনো কাজ করে না।সবসময় মদ্যপ অবস্থায় রাস্তায় প্রকাশ্যে মাতলামি করে।সরকার মাসে মাসে ওদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়।সেই টাকা দিয়েই সংসার চালায় ওরা।’
‘দেশটিতে আসার পর থেকে ৮-৯ বার হামলার শিকার হয়েছিলাম।দোকানের মালামাল লুট হয়েছে অনেকবার।দু’বার আমার হাতে গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা।প্রতিদিনই ঝরছে কারও না কারও প্রাণ।অভিযোগ করার মতো কাউকে পেতাম না।তাছাড়া আফ্রিকার পুলিশও আমাদের সহযোগিতা করেনি।নিগ্রোদের সবাই ভয় করে।’
‘দক্ষিণ আফ্রিকায় কীভাবে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান,দেশটিতে যাওয়া খুবই সহজ।বৈধ কাগজপত্র লাগে না ঢুকতে।পাসপোর্ট আগেই জমা দিয়েছিলাম।ভিসার কাজ ওরা আগেই করে রেখেছিল।১ লাখ টাকা সঙ্গে আনতে হয়েছিল। চট্টগ্রামে একটি হোটেলে রাতেই আমাদের সাতজনকে বিস্তারিত বিষয় বুঝিয়ে দেয়া হলো।’
‘প্রথমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ভোরে ফ্লাইট এরপর দুবাই বিমানবন্দর।দুবাই থেকে কেনিয়া,কেনিয়া থেকে ইথিওপিয়া। এরপর পাশের দেশ ইথিওপিয়া থেকে মোজাম্বিকে পৌঁছাই। মোজাম্বিকে দুদিন রেখেছিল আমাদের।ভোরে আমাদের আফ্রিকা বর্ডারের কাঁটাতার কেটে ঢোকানো হয়েছিল।’
দালালদের শর্ত মোতাবেক দেশ ত্যাগ করেছিলাম।সঙ্গে ছিল প্রায় ১২০০ ডলার।ডলার ওরাই ভাঙিয়ে দিয়েছিল।চুক্তি অনুযায়ী বাকি টাকা সাউথ আফ্রিকায় পৌঁছানোর পর দিতে হবে।ওই ডলার বিভিন্ন দেশে খাবার,মোবাইল রিচার্জ ও আনুষঙ্গিক কাজে লেগেছিল।কারণ দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছাতে কমপক্ষে পাঁচদিন লাগবে।
‘এরপর রাখা হয় পাকিস্তানিদের কাছে।আমাদের কাছে যা ছিল সবই কেড়ে নেয় পাকিস্তানি আদমরা।তিনদিন একটা বদ্ধরুমে আমাদের আটকে রাখে।খাওয়া-দাওয়া সবই বন্ধ।ঠিক তিনদিন পর বর্ডার পার করে দেয়।এরপর আফ্রিকান দালালরা আমাদের রিসিভ করে।রিসিভ করার পর আমাদের ফোন দিতে বলে বাড়িতে বাকি টাকা পরিশোধ করার জন্য।পৌঁছামাত্রই আরও ২ লাখ টাকা দালালদের দিতে হয়।তবেই আমরা মুক্ত।’
‘এত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি হয়।অবৈধভাবে যাওয়ায় সে দেশে চাকরি কিংবা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না।দীর্ঘদিন থাকার পর কমপক্ষে বাংলাদেশি ২ লাখ টাকা দিয়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।তবে অবৈধ প্রবাসীদের আইনি ঝামেলা নেই বললেই চলে।পুলিশকে টাকা দিলেই সব সমস্যার সমাধান।’
Comments
Post a Comment