প্রবাসীরা দেশের সূ্র্য সন্তান | প্রবাস জীবন ও কষ্টের প্রতিচ্ছবি |


SAPB | JOHANNESBURG | RSA


প্রবাস জীবন ও কষ্টের প্রতিচ্ছবিঃ 

চলচ্চিত্র কিংবা নাটক শুধু দর্শকদের বিনোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।কখনও কখনও সেই চলচ্চিত্র কিংবা নাটকে উঠে আসে কারও না কারও জীবনের গল্প।এবারের ঈদুল ফিতরে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় মেজবাহ উদ্দিন সুমনের রচনায় প্রবাসীদের জীবনের গল্প নিয়ে সাজ্জাদ সুমন নির্মাণ করেছেন নাটক ‘কলুর বলদ’।প্রচারের পর নাটকটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়।কী ছিল সেই নাটকে? বিস্তারিত লিখেছেন আখন্দ জাহিদ।

সারা দিনের পরিশ্রম ও কর্মব্যস্ততা শেষে মানুষ যখন নিজ গৃহে ফিরে আপনজনের মুখগুলো দেখতে পান, তখন সারা দিনের শ্রম, ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে ওঠে।কিন্তু দেশ ছেড়ে যারা বিদেশে পড়ে থাকেন তাদের বেলায় দিন, মাস, বছর, এমনকি যুগ পেরিয়ে গেলেও আপনজন বা পরিবারের সদস্যদের দেখা পাওয়া হয়ে ওঠে স্বপ্নের মতো।নিজের স্বপ্নকে কবর দিয়ে আপনজন বা পরিবারের সদস্যদের স্বপ্ন পূরণের নিমিত্তে নিজের জীবন উৎসর্গ করেই নিরলস কাজ করে থাকেন প্রবাসীরা।



যুগের পর যুগ প্রবাসে কাটিয়ে দিয়ে যখন দেশে ফিরে প্রিয়-জনদের সঙ্গে নিয়ে স্থায়ীভাবে বাকি সময় কাটানোর স্বপ্ন দেখেন, তখন সে স্বপ্ন পূরণের মানুষটিই হয়ে ওঠেন প্রিয়জনদের চোখের কাঁটা।তাদের মধ্যে আবার অনেকে সমাজ সংসার থেকে ভালোবাসা না পেয়ে আপনজনদের মুখের হাসি ধরে রাখতে বুকভরা কষ্ট নিয়েই আবারও দূর প্রবাসে পাড়ি জমান।

প্রবাসীদের জীবনের এমন চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে সাজ্জাদ সুমন পরিচালিত কলুর বলদ নাটকটিতে।



নাটকটির গল্পে দেখা গেছে, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তরুণ পাড়ি জমিয়েছিল জার্মানিতে।তখন রাজু নামে এক তরুণও বহু কষ্টে ভাগ্যান্বেষণের জন্য পাড়ি জমিয়েছিল সেই সুদূর জার্মানিতে। 

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সে সেখানে থাকতে শুরু করে।তারপর ধীরে ধীরে তার উপার্জন করা টাকা সে দেশে বাবা,মা, ভাই বোনের জন্য পাঠাতে থাকে। 

এই টাকাই তাদের বাঁচিয়ে রাখে।রাজু অনেকবার দেশে আসতে চেয়েছিল।কিন্তু পারেনি।কারণ সে দেশে এলে টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যাবে।পরিবারের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।তাই সে দেশে না এসে কয়লার খনিতে ৬৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপামাত্রায়ও দিনের পর দিন কাজ করে গেছে। 

মাটি ও নাড়ির টানে একসময় দেশে ফিরে রাজু।এসেই প্রথমে শোনে ‘আবার কবে যাবে’।এই কথাটিই তাকে সবচেয়ে বেশি আহত করে।এর মধ্যে অনেকের আবদার।বড় চাচা তার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আবদার করেন।ছোট ভাই প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হতে দশ লাখ টাকা চায়।বাবা বলে ছোট বোনের বিয়ের খরচ এবং যৌতুকের জন্য অর্থ চায়।পাশাপাশি একতলা ফাউন্ডেশনের বাড়ি দোতলা করার জন্য টাকা চায়। 

বন্ধু-বান্ধবরাও অকারণে অর্থ খরচ করায়।সবার কাছেই রাজু যেন সোনার ডিম পাড়া একটা হাঁস।আসলে কেউ তার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্যই করে না।সে অনেক ক্লান্ত।সে এসেছিল দেশে থেকে যেতে।এ মাটি ছেড়ে তার আর বিদেশ ভালো লাগে না।সে বাবা, মা, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব পরিবারের সঙ্গে থেকে যেতে চায়।বিয়ে করে একটি ছোট সংসার করার আশায়।

গল্পের মাধুর্যতা এবং গভীরতাই নাটকটিকে জীবনঘনিষ্ঠ করে তুলেছে।এর চেয়ে কঠিন বাস্তবতা একজন প্রবাসীর জন্য আর কোনো কিছুই হতে পারে না।সত্যিই তো! একজন প্রবাসীর জীবনের চাওয়া-পাওয়াগুলো অর্থ উপার্জন করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ।কতটা কঠিন,কতটা নির্মম এ জীবন!এ নাটকের মাধ্যমে পরিচালক বিষয়টি যে অতি সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরেছেন সেটা বেশ প্রশংসনীয়।

নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ আহমেদ, তানিয়া আহমেদ, মামুনুর রশিদ, দিলারা জামানসহ আরও অনেকে।


Comments

Popular posts from this blog

প্রেম একবারই জীবনে এসেছিলো নিরবে

হাফেজি পড়া একজন অসহায় বোনের বাঁচার আকুতি