প্রবাসে থাকলেও মনটা আমার দেশের মাটিতেই
SAPB | JOHANNESBURG | RSA
জোহানসবার্গঃ
প্রবাসে থাকলেও মনটা আমার দেশের মাটিতেই
কিন্তু না, সময় এবং পরিস্থিতি তা করতে দেয় না, কেননা বিদেশ থেকে দেশে এসে পড়ি, তবে আপন মানুষগুলো অর্থকষ্টে ভুগবে, তিনবেলার খাবার একবেলা খেতে হবে, কোনো কোনো সময় আবার না খেয়েই থাকতে হবে।
এটা চোখের সামনে ঘটলে সহ্য করতে পারবে না।তাই শত যন্ত্রণার পরও দেশের মানুষটি প্রবাসে থাকে তার কষ্ট হলেও যাতে তার প্রিয় মানুষগুলো একটু ভালো থাকে, একটু স্বস্তিতে থাকে, একটু সুন্দর থাকে, সে যেন পরবর্তীতে দেশে ফিরে সে মানুষগুলোর হাসিমুখ দেখতে পারে।
আহা, তার কাছে তখনই পরম শান্তি বলে মনে হয়।মনে হয় এই মুহূর্তটার জন্যই তো দেশের বাইরে থাকা,খানিক কষ্ট করা।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ববসবাসকারী মোহাম্মেদ আব্দুল খালেক,২০০৪ সালের মোজাম্বিকের টুরেষ্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ডুবাই হয়ে মোজাম্বিক একটি পুরনো বাড়িতে ৭ দিন ব্রেড আর ডিম খেয়ে ১ রাতের জঙ্গল পেরিয়ে সাউথ আফ্রিকার জোহানসবার্গ শহরে এসে উঠেন।প্রথম বছর সাউথ আফ্রিকার সকল যায়গায় রিপুজি পেপার (এসালম) বন্ধ থাকায় পুরো একটি বছর একটি রুমের ভিতরেই সময় পাস করে ১২টি মাস অনেক কষ্টে কাটিয়েছেন।তারপর দ্বিতীয় বছর অনেক কষ্টের বিনিময়ে এসালম পেপার বানিয়েছেন।তারপর কয়েক বছর পর পারমিট পেয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
যখন প্রথম এসেছিলেন,মাসে বেতন পেতেন ১২০০ রেন্ড।আর এই ইনকাম দিয়ে পরিবার তো দুরের কথা, নিজে চলতেও কষ্ট হয়ে যেতো।যাই হোক,তার ৩ বছর পর- একটা সময় অনেক কষ্ট করে নিজের থেকে মিলিয়ে এবং দেশ থেকে ব্যাংক লোন নিয়ে এই দেশে একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন।আর সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ আফ্রিকার খাউটেন প্রভিন্সের আওয়তায় ছোট একটি কৃষ্ণাঙ্গ লোকেশনের ভিতরে।
যে প্রতিষ্ঠান থেকে মাস শেষে ৮ থেকে ১০ হাজার রেন্ড বাহির হতো, তা সম্পুন্য দেশে পরিবারের জন্য পাঠিয়ে দিতেন।নিজের আরাম আয়েশ এর কথা চিন্তা করলে দেশে টাকা না পাঠিয়ে এই দেশেই ফুংফাং করে চলতে পারতেন।তার বিনিময়ে তার পরিবার দেশে কষ্ট করতো।কিন্তু তিনি তা করেন নি।নিজে শত কষ্ট করে দিনরাত পরিশ্রম করে, সারাক্ষন কৃষ্ণাঙ্গের ভয়ে আতঙ্কিত থাকতে হতো।রাত হলে ঠিকমত খুম হতোনা ভয়ে।কখন এসে রাতে ভাংচুর ও ডাকাতি কিংবা নিজের প্রাণটি আবার চলে যায়।সবকিছু মিলিয়ে এইভাবেই প্রতিটি প্রবাসীরাই টাকা ইনকাম করে দেশে নিজ পরিবার ও দেশের মানুষদের খেয়াল রাখেন।মোহাম্মেদ আব্দুল খালেক ও সেই প্রবাসীদের মধ্যে একজন।
দেশে দুটি জমজ মেয়ে সন্তান সাদিয়া/সায়ন্তী/ স্ত্রী, মা-বাবা রয়েছেন।তাদেরকে সুখে শান্তিতে রাখতে এই কষ্ট।আবদুল খালেক এর মত হাজারো আবদুল খালেক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে যাচ্ছেন।শুধু দেশ ও দেশের মানুষদের জন্য।
আমরা আসলে জানি না একটা দেশের ছেলে অন্য আরেকটা দেশের মাটিতে কেমন কষ্ট করে আয়-উপার্জন করে!এই বিষয় গুলো আমাদের জানারও তেমন বিষয় নয়,কেন নয়?
এই বিষয়গুলো জানা কি আমাদের দরকার নয়!নাকি এই বিষয় গুলো পাথর চাপা দেয়ার মতো কোনো বিষয়! না, দেশে থেকে একটা মানুষ বুকে কতটা কষ্ট নিয়ে দেশের বাইরে যায়, তা হয়তো যে মানুষটা যায় সে মানুষটার থেকে ভালো আর কেউ বলতে পারবে না বা কিংবা জানে না।
কেননা দেশ থেকে একটা মানুষ সুস্থ অবস্থায় বিদেশে গেল ঠিকই সে মানুষটা বিদেশ থেকে অসুস্থ অবস্থায় ফিরে আসে দেশে।তখন তার প্রিয় গুলোর কষ্ট হয় কিন্তু প্রিয় মানুষ ছাড়া বাইরের কোনো মানুষের কষ্টের লেশমাত্র হয় না।কেননা সে মানুষটা তো শুধু তার আপন মানুষগুলোর জন্যই কষ্ট করছে।তা ভুল!সে মানুষটা কষ্ট করছে একটি দেশের জন্য, একটি দেশের মানুষের জন্য, একটি দেশের সতেরো কোটি জীবনের জন্য, জীবনগুলোর বেঁচে থাকার জন্য।
প্রবাসে থাকা একজন মানুষের সবচেয়ে বড় যে টান তা হলো নাড়ির টান।এই টানের কারণেই একজন প্রবাসীকে দেশ নিয়ে ভাবায়, ভাবায় তাকে ভালো কিছু নিয়ে তার দেশের কাছে, তার নাড়ির কাছে ফিরতে হবে।নইলে তার প্রবাস জীবন ব্যর্থ।এই ব্যর্থতার কারণে কেউ কেউ দেশ ত্যাগই করে না, জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করে।এটা আসলে একটা হতাশার কারণ।
প্রবাসে কী কেউ সুখের জন্য যায়? না প্রবাসে কেউ নিজের সুখের জন্য যায় না।বরং অন্যের সুখটা দেখার জন্য প্রবাসে যায় দেশ ছেড়ে।তারা তাদের অর্জিত কাক্সিক্ষত সম্পদ দিয়ে যখন প্রিয় মানুষগুলোর জন্য প্রিয় কিছু নিয়ে আসে তখন তাদের ভালো লাগে বরং আনন্দ হয় যখন কিনা তারা বুঝতে পারে, দেখতে পারে তাদের প্রিয় মানুষ, কাছের মানুষের আনন্দ তখন তারা রীতিমতো অবাক হয়, বিস্মিত হয়।
আমাদের দেশটা যে কারণে পেছনে পড়ে আছে তা হলো দেশের কিছু মানুষগুলোর মন ও মানসিকতা এখনো খুব নিচু হয়ে আছে।যে দেশ নিচু মনমানসিকতার মানুষ লালন করে সে দেশ কী করে এগিয়ে যাবে বা তার যোগ্য অনুযায়ী কিভাবে কর্ম দেবে, তা কখনোই সম্ভব নয়।তা এখনো অবাস্তব আমাদের দেশে।এটা বাস্তব তখনি হবে, যখন মানুষ গুলোর মধ্যে পরিবর্তন আসবে কিংবা তারাও ভালো কিছু করতে শিখবে প্রিয় দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি।
আমার দেশের সরকার যদি এই বিষয়টা নিয়ে একটু কাজ করেন, তাহলে হয়তো আমার দেশের মানুষেরা এই প্রিয় বাংলাদেশ ছেড়ে প্রবাসে যেত না।বা তাদের নিজ নিজ দেশে তারা কর্মসংস্থানের খোঁজে এগিয়ে আসতো।কিন্তু না, তা এখনো সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি আমার দেশে।সম্ভবপর হয়ে উঠবে - তবে তার জন্য সময় প্রয়োজন।আগামী ১০ বছর পর দেশের অবকাঠামো আরো অধিক পরিমানে পরিবর্তনশীল হবে।আর তখন যদি দেশের কর্মসংস্থান বাড়ে, হয়তো আমরা অধিক বাংলাদেশীরা প্রবাসের নামের জীবন থেকে চিরতরে মুক্তি পাবে।
Comments
Post a Comment